• অপরাধ ও দুর্নীতি

পাবনায় নকল ও ভেজাল দুধের রমরমা বানিজ্য

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ০৮ মে, ২০২৪ ২০:০০:১৮

ছবিঃ সিএনআই

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় নকল ও ভেজাল দুধের রমরমা বানিজ্য চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জেল, জরিমানা ও নকল দুধ তৈরির সামগ্রী জব্দ করেও নকল দুধ তৈরি ঠেকানো যাচ্ছে না। আসল দুধের সাথে এ সব নকল দুধ মিশিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ নকল ও ভেজাল দুধ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। নকল দুধ সরবরাহের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় নকল দুধ তৈরিকারকদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। উপজেলার পাশেই বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা ফ্যাক্টরি থাকায় পাবনা জেলার সবচেয়ে বেশি দুগ্ধ খামারী রয়েছে ফরিদপুর উপজেলায়।

উপজেলা সমবায় অফিসার কায়সার মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, ফরিদপুর উপজেলায় ১২৭টি নিবন্ধিত দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি রয়েছে। এ সব সমিতির বেশির ভাগ বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় দুধ সরবরাহ করে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরো ব্যক্তিগত দুই সহস্রাধিক দুগ্ধ উৎপাদনের খামার রয়েছে।

উপজেলায় প্রাণ, আকিজ, ব্র্যাক, ইবলু, আড়ং ও মিলকভিটার প্রায় ৫৪টি চিলিং সেন্টার দুধ সংগ্রহ পয়েন্ট রয়েছে। উৎপাদিত দুধের প্রায় ৭০শতাংশ এসব প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করে থাকে। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের বেশির দুধ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শীতলীকরণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। এসব স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ সয়াবিন তেলের সাথে কষ্টিক সোডা,চিনি,লবণ এবং আরো কিছু ক্যামিকেল ও পানি মিশিয়ে দুধ তৈরি করে থাকে।এসব নকল ও ভেজাল দুধ অল্প কিছু আসল দুধের সাথে মিশিয়ে বাজারজাত করে থাকে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি নির্বাহী মাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা.মুর্শিদা খাতুন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে উপজেলার পার ফরিদপুর গ্রামের শফি প্রামানিককে নকল দুধ তৈরির অপরাধে ৫০ হাজার টাকা এবং গোপালনগর গ্রামের বাঁধের কারখানা থেকে নকল দুধ তৈরির অপরাধে একই ব্যক্তি শফি প্রামানিককে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করে দুধ তৈরির মেশিনসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করেন।

এ ছাড়া নকল দুধ তৈরির অপরাধে উপজেলার ডেমড়া বাজারের আব্দুল আলীমকে দেড় লক্ষ টাকা এবং আরকান্দি বাজারের সাইদুল ইসলামকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হয়। গত ৩ মে মৃধাপাড়া গ্রামের সরোয়ারকেও নকল দুধ তৈরির জন্য ১ লক্ষ টাকা জরিমানাসহ মেশিন জব্দ করা হয়। এসব করেও নকল ও ভেজাল দুধ তৈরি ঠেকানো যাচ্ছেনা।

প্রাণিসম্পদ সেবাসপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গোপেশ চন্দ্র সরকার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ফরিদপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশি এবং ভাল দুধ উৎপাদন হলেও ডেমড়া, আরকান্দি,পার ফরিদপুর ও গোপালনগরের একটি দুষ্ট চক্রের নকল দুধ তৈরির কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ডেমড়া বাজারে ভোলা ঘোষ, আব্দুল আলীমসহ ২৫ থেকে ৩০ জন, অওারকান্দি বাজারে রেজাউল ও জহুরুলসহ ১৩ জন, পার ফরিদপুরের সালাম ও শফিকুল এবং গোপালনগরের শফি ও তার ভাই উপজেলার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ নকল দুধ তৈরি করছে। এ সব নকল দুধ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এজেন্টদের মাধ্যমে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে চক্রটি।

পাবনা জেলা দুগ্ধ খামারী এসোসিয়েশনের সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ফরিদপুরে উদ্বেকজনকহারে নকল দুধ তৈরির সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, কেমিকেল মিশিয়ে তৈরি নকল দুধ মানব শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতি করে এবং ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজ, লিভারসিরোসিসসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শিরিন সুলতানা বলেন, দুধসহ খাদ্যে ভেজাল মেশানো দন্ডনীয় অপরাধ। এসব ভেজালকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo